ভারতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যান ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা নিয়ে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তার মতে, টাইগাররা সেমিফাইনালে যেতে পারে।

রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ৪ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন আকাশ চোপড়া। সেখানে তিনি বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ও বোলিং সামর্থ্য এবং এই দলের কোন ক্রিকেটারকে তার পছন্দ, তা নিয়ে খোলামনে নিজের অবস্থানের কথা জানান। 

পাকিস্তানের তুলনায় যে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শক্তিশালী তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে আকাশ চোপড়া বলেন, ‘এশিয়ায় যদি ভারতের পর কোনো দলের দাপট থেকে থাকে তাহলে সেটা এখন আর পাকিস্তান নয়, সেই দলটি হলো বাংলাদেশ।’      

২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ  নক আউট পর্বে (সেমিফাইনাল) খেলেছিল। এশিয়া কাপে তো ফাইনালেই খেলেছিল। যার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই দলকে যদি আপনি হালকাভাবে নেন তাহলে আপনি মস্ত বড় ভুল করছেন। বিশ্বকাপে এই দল ভালো খেলবে। অন্তত ৯ ম্যাচ ওরা খেলবে, আর ম্যাচও জিতবে। হ্যা, শিরোপার দাবিদার হয়তো আমি বলবো না, তবে নক আউটে (সেমিফাইনালে) যে যাবে সেটা আমি অবশ্যই বলবো।’  

‘বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যদি নজর দেই তাহলে তামিম ইকবাল দারুণ এক ব্যাটসম্যান। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ফর্মেও আছেন তিনি। তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন সৌম্য সরকার বা লিটন দাস। লিটন দাস এশিয়া কাপের ফাইনালে দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন। সৌম্য উপরেও ব্যাট করতে পারেন, নিচেও ব্যাট করতে পারেন সাথে বোলিংটাও ঠিকঠাক করেন। সৌম্য সরকার দলে বৈচিত্র্য আনতে পারেন।’

‘এরপর আসবেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম। তারা টপ অর্ডার সামলে নেবে। এই দলকে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে তারা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে কিভাবে ব্যবহার করবেন। সে এমন একজন ক্রিকেটার যার সামর্থ্য আছে। গত বিশ্বকাপেও সে দুইটি সেঞ্চুরি করেছিল। তার নিকে আপনার নজর দেয়া উচিৎ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রিয়াদকে বাংলাদেশ বেশি সুযোগ দেয় না। আমি চাই তাকে ব্যাটিং অর্ডারের ওপরের দিকে খেলানো উচিত। ৫ এর পরে তো অবশ্যই না। তাকে অন্তত ৫ নম্বরে খেলতে দেয়া উচিত। সাকিবের রান করা জরুরি। মুশফিক তো টপ ক্লাস খেলোয়াড়। সে তো রান করবেই। এরপর মোসাদ্দেক যদি আসে, সৌম্য সরকার উপর-নিচে আসতে পারে ।’ 

‘বর্তমান ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে বাংলাদেশ দল ২৮০-২৯০ রান সংগ্রহ করতে পারে । এমন রান করলে বোলিং কেমন হবে বাংলাদেশের? মাশরাফি বিন মর্তুজার বেশকিছু অপারেশনের পর গতি ওরকম নেই। তবে সে উইকেটও পায়, দলকে সাফল্যও এনে দেয়। সে উঁচু মাত্রার একজন ক্রিকেটার ও একজন থিংকার। মুস্তাফিজুর রহমান বাঁ হাতে বল করে কাটার, ইয়র্কার করতে পারেন, ডেথ বোলিংয়ে ভালো বল করেন। রুবেল হোসেন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সবচেয়ে গতিময় বোলার। রুবেল বল রিভার্স সুইং করাতে পারেন।’

‘এই দলের একজন ক্রিকেটারকে আমার খুব পছন্দ। তার নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ অ্যাকশনে স্পিন বল করে, ব্যাটিংটাও ঠিকঠাক করে। মিরাজ একজন ডাইমেনশনাল খেলোয়াড়। মোসাদ্দেক হোসেনকে দল খেলাতে পারে। ব্যাটিংটা ঠিক ঠাক করেন, মাঝে মধ্যে বলও করতে পারেন।’

‘এই দলের এক্স ফ্যাক্টর কে হতে পারেন? যেহেতু মঞ্চটা বড়, আপনি বড় বড় খেলোয়াড়ের দিকেই আঙ্গুল দেবেন। এক তো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আমার খুব পছন্দের ক্রিকেটার। সে ভালো খেললে দল খুব ভালো ফল করবে। সে দলকে ফিনিশিং টাচ দিতে পারবে। এর সাথে সাকিব আল হাসানের ফর্ম। সে যদি ব্যাট ও বলের সাথে ভালো ফর্মে থাকে, তাহলে দল অনেক উপকৃত হবে। আইপিএলে ফর্ম না থাকলেও আন্তর্জাতিওক ক্রিকেটে ফর্ম বদলাবে যেটা বাংলাদেশ দলের তার কাছ থেকে প্রত্যাশা আছে।’

‘এই দল বিশ্বকাপে কোন পর্যন্ত যেতে পারে? এই দল সেমিফাইনালে যেতে পারে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আমার চোখে টপ তিন দল। চার নম্বরে আমার নজরে বাংলাদেশ আগেভাগেই থাকবে। চার নম্বর জায়গার জন্য নিউজিল্যান্ড লড়বে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানও আছে। তবে পাল্লাটা বাংলাদেশের পক্ষে একটু হলেও ভারি। নতুন বল যদি দলটি সামলে নেয় তাহলে বাংলাদেশ যেকোন দলের জন্য ভয়ের কারণ হবে।’

তবে পাকিস্তানের বদলে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালের জন্য এগিয়ে রাখায় এটিকে ভালো চোখে দেখেনি পাকিস্তানি ভক্তরা। আকাশ চোপড়ার ভিডিও প্রকাশের পর এক পাকিস্তানি টুইটারে আকাশ চোপড়াকে বলেন ‘এটা কি ধরনের ঠাট্টা করছেন? বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলবে? হাহাহা।’

সেই পাকিস্তানি ভক্তকে রিটুইট করে জবাব দিয়ে আকাশ চোপড়া বলেন, ‘আপনাদের বাংলাদেশকে নিয়ে হাসাহাসি করা উচিত নয়। তারা অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে, গত এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলেছে। পাকিস্তান কি করেছে সেই ২ আসরে মনে পরে? আমাদের উচিত সবাইকে সম্মান দেয়া। ভারত থেকে আপনার জন্য ভালোবাসা রইলো।’

আকাশ চোপড়ার ভিডিও বার্তা দেখতে ক্লিক করুন এখানে- 

আরআইএস