• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১, ০৯:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৪, ২০২১, ০৪:০২ এএম

অজি বধ

অজি বধ

জৈব সুরক্ষা বলয়, নানা শর্ত, মানসিক ক্লান্তি, নিরাপত্তার কড়াকড়ি- সিরিজ শুরুর আগে এগুলোই ছিল আলোচনায়।  তবে এ সকল আলোচনাকে ছাপিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মিরপুরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে অজিদের  রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

মাত্র ১৩১ রানের মাঝারি পুঁজি নিয়ে যেমন শুরু প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের, ঠিক তেমন শুরুই এনে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান। ইনিংসের প্রথম বলেই বোল্ড করে দিলেন অ্যালেক্স কেয়ারিকে। রাউন্ড দ্য উইকেটে অফ স্টাম্পে লেংথ ডেলিভারি করেন মেহেদী। স্পিন করে বেরিয়ে যাবে ভেবে জায়গা বানিয়ে খেলার চেষ্টা করেন বাঁহাতি কেয়ারি। কিন্তু বল অ্যাঙ্গেলে ঢোকে ভেতরে, কেয়ারির ব্যাট ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে। শূন্য রানে অস্ট্রেলিয়া হারাল প্রথম উইকেট।

প্রথম ওভারের পর দ্বিতীয় ওভারেও আরেকটি উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। এবার নাসুম আহমেদের বাঁহাতি স্পিনে স্টাম্পড জশ ফিলিপি। তিনি যদিও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ঝড় তোলার। নাসুমের শর্ট বলে বলে পুল করে ছক্কা মারেন তিনি, পরের বলে নেন দুই রান।

এরপর চেষ্টা করেন বেরিয়ে এসে খেলার। কিন্তু নাসুমের ফ্লাইট ও লুপ ছিল দুর্দান্ত। বল টার্ন করে বেরিয়ে যায় ফিলিপির ব্যাটের পাশ দিয়ে। বল গ্লাভসে জমিয়ে চোখের পলকে বেল উড়িয়ে দেন কিপার নুরুল হাসান সোহান।

প্রথম দুই ওভারের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ওভারেও বাংলাদেশ পায় আরেকটি উইকেটের দেখা। এবার প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পেলেন সাকিব আল হাসান। মি. অলরাউন্ডারের বলটি ছিল অফ স্টাম্পে, ফ্লাইটেড ডেলিভারি। মইসেস হেনরিকেস চেষ্টা করেন সুইপ খেলার। বল তার ব্যাটের নিচে লেগে দুই পায়ের ফাঁক গলে আঘাত করে স্টাম্পে। 

চতুর্থ উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়েন মিশেল মার্শাল ও ম্যাথু ওয়েড। বোলিং আক্রমণে ফিরে আবারো টাইগারদের উইকেট এনে দেন নাসুম ওয়েডের চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় জমিয়ে তাতে অবদান রাখলেন মুস্তাফিজুর রহমান। লেগ স্টাম্পে আপাতত সাদামাটা বলে বাউন্ডারি চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। টাইমিং করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শর্ট ফাইন লেগে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান মুস্তাফিজ।  ২৩ বলে ১৩ রান করেন ওয়েড। অজিদের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৪৯। 

নাসুম আহমেদ এরপর উইকেটে পেয়েছেন ভাগ্যের ছোঁয়ায়। হিট উইকেট হয়ে যান অ্যাশটন অ্যাগার। বেশ পিছিয়ে গিয়ে খেলছিলেন অ্যাগার। বাঁহাতি স্পিনারের বল খেলে ফলো থ্রোয়ে পিছিয়ে গেলেন আরও, পা দিয়ে লাগল স্টাম্পে! একটু এগিয়ে ব্যাটসম্যান টের পেলেন, কী কাণ্ড ঘটে গেছে। ১২ বলে ৭ রান করেন অ্যাগার।

সাকিব আল হাসানকে ছক্কা মেরে ডানা মেলার আভাস দিয়েছিলেন বিপজ্জনক মিচেল মার্শ। আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ থামালেন ছন্দে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে। নাসুমকে স্লগ সুইপ করে টাইমিং করতে পারেননি মার্শ। সীমানা থেকে দৌড়ে এসে দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচ নেন শরিফুল ইসলাম। ৪৫ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ৪৫ রান করেন মার্শ। তিনি নাসুমের চতুর্থ শিকার। 

চার মেরে ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন অ্যাশটন টার্নার। পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। স্ট্রেটে খেলতে চেয়েছিলেন টার্নার। কিন্তু বল যায় এক্সট্রা কাভারে। সেখানে ঠাণ্ডা মাথায় ক্যাচ মুঠোয় জমান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১০ বলে ৮ রান করেন টার্নার।

১৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসে উইকেট পেলেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসার ফিরিয়ে দিলেন অ্যান্ড্রু টাই ও অ্যাডাম জ্যাম্পকে।

ছক্কার চেষ্টায় লং অফে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে ক্যাচ দেন টাই। পুল করে ডিপ মিডউইকেট সীমানায় আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন জ্যাম্পা।  ম্যাচের শেষ বলে মিচেল স্টার্ককে বোল্ড করে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১০৮ রানে থমকে গেল অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। 

বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ১৯ রানে নেন ৪ উইকেট। তার শেষ স্পেলটা দারুণ ২-০-৬-২! ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান নিয়ে ২ উইকেট নিলেন মুস্তাফিজ। শরিফুল ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। সাকিব ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে পান ১ উইকেট।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টসে গেরে আগে ব্যাট  করতে নামা বাংলাদেশ ৭ উইকেটে মাত্র ১৩১ রান করে। ইনিংসের প্রথম ওভারে মিচেল স্টার্কের করা দ্বিতীয় বলটি ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। দারুণ ফ্লিকে বল উড়িয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ছক্কা দিয়ে রানের খাতা খোলা টাইগাররা আশার পালে হাওয়া লাগালেও তা চলে যেতে সময় লাগেনি। 


 
চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে আগের তিন ম্যাচে দুটি ফিফটি করা সৌম্য সরকার বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না ক্রিজে। জশ হ্যাজেলউডের বল স্টাম্পে টেনে এনে হলেন বোল্ড। জায়গা করে নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য। শরীর তাক করে আসা বল কাট করতে চেয়েছিলেন তিনি; কিন্তু বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ভাঙে ১৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৯ বলে মাত্র ২ রান করে ফেরেন সৌম্য। 

পঞ্চম ওভারে ওয়েড আবারও বোলিংয়ে নিয়ে আসেন স্টার্ককে। কিন্তু ওভারের দ্বিতীয় বলে আবারও ডিপ কভার পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান নাইম। এরপর পঞ্চম বলে নেন সিঙ্গেল। 


 
পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারে চতুর্থ বোলার হিসেবে অ্যান্ড্রু টাইকে নিয়ে আসেন ওয়েড। ওভারের তৃতীয় বলে এই পেসারের বাউন্সারে পুল করে বাউন্ডারি হাঁকান নাঈম। পরের বলে নেন ২ রান। ওভারের শেষ বলে আসে সিঙ্গেল। 

সপ্তম ওভারে আবারও জ্যাম্পাকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন ওয়েড। ওভারের প্রথম ৫ বলে মাত্র ৪ রান দেয়া এই লেগ স্পিনারকে শেষ বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন নাঈম। জ্যাম্পার ফুল লেন্থে ফেলা বলে বোল্ড হয়ে ২৯ বলে ৩০ রান করে ফেরেন তিনি। 

অষ্টম ওভারে অ্যাস্টন অ্যাগারের বিপক্ষে ৪ রান নেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে জাম্পাকে সোজা উড়িয়ে চার মারেন সাকিব। পরের বল এজ হয়ে স্লিপের সাইড দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারিতে। সেই ওভারে আসে ১০ রান। 

দশম ওভারের তৃতীয় বলে স্লিপে অ্যাস্টন টার্নারের হাতে জীবন পান মাহমুদউল্লাহ। সে সময় তার রান ছিল ৫। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তোলে ৫৮ রান।

১২তম ওভারের প্রথম বলেই ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ছক্কার মারার বলের বলে আবারও তুলে মারতে গিয়ে ময়সেস হেনরিকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের এই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

হ্যাজেেউডের বলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ করেছেন ২০ বলে ২০ রান। এরপর ১৫তম ওভারে টাইয়ের স্লোয়ারে থার্ড ম্যানে মিচেল মার্শের হাতে ধরা পড়েন নুরুল হাসান। ৪ বলে ৩ রান করে ফেরেন এই উইকেটরক্ষক। ১৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮৯।

১৬তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ৭ রান দেন অ্যাগার। ৪ ওভারে ৬'র নিচে ইকোনমি রেটে ২২ রান দিয়ে শেষ করেন তিনি। তখনও ১৬ ওভারে দলীয় ১০০ পার করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৬তম ওভারের চতুর্থ বলে হ্যাজেলউডকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্বাগতিকদের ১০০ পূরণ করেন আফিফ।

সেই ওভারের শেষ বলে হ্যাজেলউডকে সামনে এগিয়ে স্লগ করতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হন সাকিব। ৩৩ বলে ৩৬ রান করে বিদায় নেন তিনি। ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন অজি এই পেসার।

১৮তম ওভারের শেষ বলে দারুণ এক ইয়র্কারে শামিম পাটুয়ারিকে ৪ রানে বোল্ড করেন স্টার্ক। এরপর ক্রিজে নেমে আফিফকে সঙ্গ দেন শেখ মেহেদি। ১৯ ওভার শেষে ৬ উইকেটে বাংলাদেশের স্কোর তখন ১২০।

শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসা স্টার্ককে রিভার্স স্কুপে ৪ মারেন আফিফ। এরপরের বলে এই পেসারের ফুল টসে বোল্ড হলেও আম্পায়ার নো বল দেন। সঙ্গে বাংলাদেশ পায় ৩রান।

তবে ফ্রি হিটে আকাশে বল তুলে মাত্র এক রান নিতে পারেন আফিফ। এরপর পঞ্চম বলে আসে এক রান। ইনিংসের শেষ বলে ইয়র্কারে বোল্ড হন আফিফ। এর মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৫০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন অজি এই পেসার।