• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০১৯, ০৩:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৭, ২০১৯, ০৩:৪৯ পিএম

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন : ধসে যাচ্ছে বসতবাড়ি রাস্তাঘাট 

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন : ধসে যাচ্ছে বসতবাড়ি রাস্তাঘাট 

বাগেরহাটের শরণখোলায় ‘আত্মঘাতী’ নামের একপ্রকার ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে ধসে যাচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা এবং হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ড্রেজার দিয়ে গ্রামাঞ্চলের খাল, বিল ও পুকুর থেকে যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। ড্রেজার মালিকরা বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে আসছে এ অবৈধ কারবারটি।

আবার এসব ড্রেজার দিয়ে উত্তোলনকৃত বালুর বেশিরভাগই স্থানীয় ঠিকাদাররা তাদের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছে। সড়ক ও সরকারি স্থাপনার মেঝে ভরাট করা হচ্ছে এ বালু দিয়ে। ভূগর্ভস্থ এ বালুতে কাদামাটির পরিমাণ বেশি থাকে ফলে, মাটি মিশ্রিত এ বালু দিয়ে তৈরি সড়ক ও স্থাপনা টেকসই না হওয়ায় প্রতিবছর সরকারের উন্নয়ন কাজের কোটি কোটি টাকা গচ্ছ যাচ্ছে। তাছাড়া, কম খরচে এবং সহজ পদ্ধতিতে বালু পাওয়ায় ঠিকাদারদের পাশাপাশি বসতবাড়ি নির্মাণেও অনেকে পরিবেশ বিধ্বংসী এই ড্রেজার ব্যবহার করছে। এ নিয়ে এলাকাবসী বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করলেও তা কোনো কাজে আসছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হোগলপাতি গ্রামের ওবায়দুল খান, ছরোয়ার খান, আমড়াগাছিয়ার আবুল ফরাজী, সুমন শরীফ, বাধাল গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, উত্তর তাফালবাড়ীর এমাদুল ঘরামী, বাংলাবাজার এলাকার বাচ্চু বয়াতীরসহ শরণখোলায় ১০-১২টি আত্মঘাতী ড্রেজার রয়েছে। ডাক পড়লেই মেশিনপত্র নিয়ে গ্রামের আনাচেকানাছে ছুঁটে যাচ্ছে ড্রেজার মালিক-শ্রমিকরা। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিনের মাধ্যমে কম্পন সৃষ্টি করে প্লাস্টিকের পাইপ মাটির গভীরে ঢুকিয়ে সেখান থেকে কাদামাটি মিশ্রিত বালু উত্তোল করা হচ্ছে।

সম্প্রতি আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বতসবাড়ি দেবে যাওয়ার বেশ কয়কটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

উপজেলার পশ্চিম বনিয়াখালী গ্রামের মো. সোহবরাব শিকদার জানান, কিছুদিন আগে নলবুনিয়া-বানিয়াখালী সড়ক ও পশ্চিম বানিয়াখালী খালের ওপর নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক ভরাটের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাদের বাড়ির পেছনের খালে আত্মঘাতী ড্রেজার বসায়। সেখান থেকে বালু উত্তোলন করায় তার বাড়িসহ আশপাশের আরো কয়েকটি বাড়িতে বড় বড় ফাঁটল দেখা দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও ড্রেজার মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়।

এছাড়া, সাউথখালী ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামের শহিদুল কবিরাজের বাড়ির সামনের সড়কের কাজে পাশের খাল থেকে বালু উত্তোলন করায় ওই এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে। চালিতাবুনিয়া সরকারি পুকুর আত্মঘাতী দিয়ে খনন করায় পাড়ে ফাঁটল ধরেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। 

বছর খানেক আগে রায়েন্দা থেকে তাফালবাড়ি অভিমুখী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকুড়লা এলাকার মোল্লা বাড়ির সামনের খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে মহাসড়কের প্রায় ১০০ মিটার বিশাল ফাঁটল ধরে দেবে যায়। এমনকি, গত দুই বছর আগে তাফলাবাড়ি বাজারের পাশের খাল থেকে বালু উত্তোলন করায় পাড়ে ফাঁটল ধরে। সেই ফঁটল ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় খাল পাড়ের বাসিন্দা মৃত মুক্তিযোদ্ধা আ. হক হওলাদার, শহিদুল শরীফ ও কাদের গাজীর বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মো. মুনসুর রহমান বলেন, বিষয়টি গাছের মগডালে বসে গোড়া কাটার মতো অবস্থা! মাটির নিচ থেকে কাদা বালু উত্তোলন করা হলে ভূমির উপরিভাগ ঠিক থাকলেও তলদেশের ব্যাপক জায়গা নিয়ে ফাঁকা হয়ে যায়। এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে বড় বড় স্থাপনা, রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক এলাকা দেবে যেতে পারে। এটা পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি।

আত্মঘাতী ড্রেজারের মাধ্যমে উত্তোলনকৃত কাদামাটি মিশ্রিত এ বালু দিয়ে সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, এলজিইডি’র কাজে যথাযথ মান বজায় রেখেই বালু ব্যবহার করতে হয়। আত্মঘাতী ড্রেজারের কাদা বালু ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুন অর রশিদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনলাম। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কেএসটি

আরও পড়ুন