• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০১৯, ০৮:৪৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৪, ২০১৯, ০৮:৪৪ পিএম

মমতা সরকারের একচোট নিলেন পুরুষোত্তম রূপালা

মমতা সরকারের একচোট নিলেন পুরুষোত্তম রূপালা
কৃষি ও কৃষক কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা -ছবি : কলকাতা প্রতিনিধি

মোদী সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করার অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার উঠেছে। দিল্লি থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে চিঠি দিলেও তার কোনও উত্তর পাওয়া যায় না। এমনকি ক্ষেত্র-বিশেষে চিঠির প্রাপ্তি-স্বীকার পর্যন্ত করেন না পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলারা। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয়েই যে এ কাজ হয়, সে ব্যাপারটিও বারবার উল্লেখ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে যান না মমতা। এমনকি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় বৈঠকে থাকেন না পশ্চিমবঙ্গের কোনও মন্ত্রী বা অফিসার। এই ধরনের অসহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী বলেও একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।

শুধু দিল্লির সরকারই নয়, গত গত বছর ধরে (২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা) একই অভিযোগ করে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেতারাও। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া তো দূরে থাক, চিঠির প্রাপ্তি-স্বীকারও করা হয় না। অনেকটা এই অভিযোগ নিয়েই সম্প্রতি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা সরকারের দ্বৈরথ চরমে উঠেছে। কলকাতায় এসে এবার সেই একই অভিযোগ করে গেলেন দিল্লির কৃষি ও কৃষক কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা।

রোববার (২৪ নভেম্বর) কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন রূপালা। সেখানে তিনি বলেন, দেশের কৃষকদের সুবিধার্ধে ‘প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি যোজনা’র আর্থিক সহায়তা নিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মমতা সরকারের একতরফা এই সিদ্ধান্তের জেরে মার খাচ্ছেন এই রাজ্যের কৃষকরা। তারা কেন্দ্রীয় এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছেন।

রোববার এই অভিযোগ তুলেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা, রাজ্যের কৃষি দফতরের প্রতি চরম বিষোদগার করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জেরে সারা দেশে কৃষকদের প্রতি বছর ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়। বর্তমানে ভারতের সাত কোটি কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কত সংখ্যক কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা যেতে পারে, সে ব্যাপারে কোনও তথ্যই মমতা সরকার দিচ্ছে না। বারবার বলা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ ব্যাপারে কোনও রিপোর্ট পেশ করেনি। এমনটাই অভিযোগ এনেছেন রূপালা।

তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার যখন এই সুবিধা তাদের কৃষকদের দিতে রাজি হচ্ছে না, তখন এই সুবিধা সরাসরি কীভাবে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে মোদী সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও কৃষকদের সরাসরি কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। তার সঙ্গে দিল্লির এই টাকা যুক্ত হলে কৃষকদের আরও কিছুটা সুরাহা হতে পারত বলে মন্তব্য করেছেন রূপালা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বক্তব্য হল, রাজ্য সরকার যেহেতু এরই মধ্যে আলাদা করে অর্থ দিচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রীয় অর্থ নিয়ে তারা অতিরিক্ত মাথা ঘামাতে রাজি নন।

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা মালদহের সাংসদ আবু হাসনাত খান চৌধুরী (ডালুবাবু) এ প্রসঙ্গে জানান, এ যেন অনেকটা রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায় গোছের ব্যাপার। মোদী সরকারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইগোর লড়াইয়ে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা। এমনিতেই এই রাজ্যের কৃষকদের দুর্গতির শেষ নেই। গত চার বছরে কয়েক হাজার কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। মহাজনদের থেকে নেয়া টাকা শোধ দিতে না পারা, উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম না পাওয়া এমনকি সরকারের ঠিক করে দেয়া কিছু কিছু ফসলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যেও তাদের দুর্দশা ঘোচে না। ফলে প্রায় সারা বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গে কৃষক আত্মহত্যার মিছিল চলতেই থাকে।

গত বছর (২০১৮) ডেঙ্গু নিয়ে ঠিক একই ধরনের অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল মমতা সরকারের বিরুদ্ধে।২০১৭- ১৮ এই দু’বছর পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু প্রায় মহামারীর চেহারা নেয়। দিল্লির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে একাধিকবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও ডেঙ্গু নিয়ে কোনও তথ্যই দিল্লিতে পাঠায়নি পশ্চিমবঙ্গ বা পাঠালেও সে তথ্য এতটাই দায়সারা ছিল, যে প্রকাশ্যেই বিষ্ময় প্রকাশ করেছিলেন চিকিৎসকরাও। সে সময় ডেঙ্গু তথ্য এবং ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা চাপা দিতে উঠে-পড়ে লেগেছিল মমতা সরকার।

ডিডিজি/এসএমএম

আরও পড়ুন