• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯, ১০:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯, ১০:০৯ পিএম

উষ্ণতা ছড়াচ্ছে সিটি নির্বাচন

উষ্ণতা ছড়াচ্ছে সিটি নির্বাচন
শেখ ফজলে নূর তাপস, আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন (ক্লকওয়াইজ)

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচন ২০২০

.........................

জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের মাথায় ঢাকায় ৩০ জানুয়ারি আবারও নৌকা-ধানের শীষের লড়াই। সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ঢাকার দক্ষিণে নৌকা প্রতীকে লড়বেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস ও ধানের শীষ প্রতীকে ইশরাক হোসেন। উত্তরে নৌকা প্রতীকে লড়বেন বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ধানের শীষ প্রতীকে তাবিথ আউয়াল।

মনোনয়ন পেয়ে দুই দলের প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতিতে জমে উঠেছে ঢাকা সিটি নির্বাচন। শীতের মধ্যে ভোটের মাঠে উষ্ণতা ছড়াচ্ছেন তারা। ঢাকা নগরবাসীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন সব প্রার্থীই।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে দলের মনোনীতদের নাম ঘোষণা উপলক্ষে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। সকাল ১১টায় শুরুর কথা থাকলেও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুপুর ১২টার কয়েক মিনিট আগে।

কোনও ভূমিকায় না গিয়ে উত্তর সিটিতে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে মনোনীতদের নাম ঘোষণা শুরু করেন ওবায়দুল কাদের। এর পরপরই ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে দলীয় প্রার্থীর নাম। পরে একে একে উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে কাউন্সিলর পদে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। রাতে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের নাম ঘোষণা করা হয়।

আওয়ামী লীগের চমক

ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদলের ঘটনায় চমক ছিল। বাদ পড়েছেন সাঈদ খোকন, দাঁড়াচ্ছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তবে উত্তরে আতিকুল ইসলামের ওপরেই ভরসা রাখছে সরকারি দল।

দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, নির্বাচিত হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মানুষের সব নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে নিজের সবটুকু সময় ব্যয় করবেন। অপরদিকে, আবারও নির্বাচিত হলে তাপসের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে উন্নত ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার করেন ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

তাবিথ-ইশরাকে আস্থা বিএনপি

বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর ভোটের লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকার উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা থাকছে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে। বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে যানজট, গণপরিবহন সংকট, বায়ু দূষণ কমানোসহ নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী।

উত্তর সিটিকে আদর্শ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ১২ দফা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে চান তাবিথ আউয়াল। নানা সমস্যা সমাধান করে ঢাকাকে দেখতে চান নারীবান্ধক শহর হিসেবে।

তাবিথ আউয়াল জানালেন, উত্তর ঢাকার উন্নয়নে ১২ দফা কর্মপরিকল্পনা থাকছে তার ইশতেহারে।

এবারই প্রথম কোনও ভোটের লড়াইয়ে নামছেন সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন। দক্ষিণ ঢাকার খেলার মাঠ-পার্কসহ সরকারি জমি দখলমুক্ত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ইশরাক হোসেন।

সাঈদ খোকন

খোকন নেই কেন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আতিকুল থাকলেও দক্ষিণ সিটি থেকে সরে দাঁড়াতে হলো সাঈদ খোকনকে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সফল না হলেও বেফাঁস মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। এছাড়া যানজট থেকে শুরু করে দখলমুক্ত ফুটপাত, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বুড়িগঙ্গাকে স্বরূপে ফেরানো, রাসায়নিকের গুদাম উচ্ছেদসহ তার দেয়া বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেছে অধরা।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল দক্ষিণ ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন। তার বাবা মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক উত্তরের দায়িত্ব নিয়ে যখন নগরবাসীর মনোযোগ কাড়েন তখন একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করেন দক্ষিণের মেয়র খোকন।

রাজধানীসহ সারা দেশ যখন ডেঙ্গু আতঙ্কে বিপর্যস্ত, তখন একে গুজব বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ডেঙ্গু ও ছেলেধরা গুজব একই সূত্রে গাঁথা।

সাঈদ খোকন নিজে বরাবরই দাবি করেছেন, মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের যে তথ্য এসেছে সেটি কাল্পনিক। এটা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক, বিভ্রান্তিমূলক। ছেলে ধরা আর সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য একই সূত্রে গাঁথা। তার এই বক্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। 

রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে গত ২৫ জুলাই এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র খোকন।

ভোটের আগে দেয়া দখলমুক্ত ফুটপাত, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বুড়িগঙ্গাকে স্বরূপে ফেরানো, রাসায়নিকের গুদাম উচ্ছেদ, মাঠ ও পার্ক উদ্ধার থেকে শুরু করে যানজটমুক্ত নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি- এসবের বেশিরভাগই রয়ে গেছে অধরা।

২০১৬ সালে কোটি টাকার ডাস্টবিন বসানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায়ও সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে এসব কারণেই এবার নৌকার মনোনয়ন পাননি সাঈদ খোকন।

দলের সাধারণ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলছেন, নানা তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনার পর যোগ্য ও জনপ্রিয়তা দেখেই মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

২০১৭ সালে আজিমপুরের পার্ল হারবাল কমিউনিটি সেন্টারের পাশে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশের জায়গাতেই পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিলেন খোকন। পরে সমাবেশস্থলের সামনে ট্রাকে করে এনে ফেলা হয়েছিল সিটি করপোরেশনের বর্জ্যও।

রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়নপত্র বিক্রি 

ঢাকায় এবার রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। দুই সিটিতে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১৬৯ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এই মহাযজ্ঞের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

কর্মকর্তারা জানান, ৩৫ হাজার ইভিএমে ভোট হবে ঢাকায়। মক ভোটিং হবে ২৫ থেকে ২৮ জানুয়ারি।

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ৮, কাউন্সিলর পদে ৮০৫, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৭৬ মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১ জন।

ঢাকা দক্ষিণে সব পদে মনোয়নপত্র নিয়েছেন ১১৮০ জন। যারা প্রার্থী হতে চাইছেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নির্বাচন কমিশন জানান, যান্ত্রিক গোলযোগ এড়াতে ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি বুথে একটি করে অতিরিক্ত ইভিএম সরবরাহ করা হবে। ভোটার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।

এসএমএম

আরও পড়ুন