• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৯:৫৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৯:৫৬ পিএম

৫০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, ইসির কপালে ভাঁজ

৫০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, ইসির কপালে ভাঁজ
ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রতীকী ছবি

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫০টি ভোটকেন্দ্র নিয়ে দুর্ভাবনায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের দিন ওইসব কেন্দ্রে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার উদ্ভব না হয়, সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা ছক কষতে আইন-শৃঙ্খলা সংস্থাকে নিদের্শনা দিয়ে রেখেছে ইসি।  

জানা গেছে, ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯২টি ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ৯২টি ওয়ার্ডের ৫০টি কেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কেন্দ্র ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’। 

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর কিছুদিন আগে গণমাধ্যমকে জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য ভোটের সময় সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। কেন্দ্রভিত্তিক সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকবে।

স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মোতায়েন থাকবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।  

ভোটকেন্দ্র সংক্রান্ত একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসিতে ২৩টি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে ২৭টি কেন্দ্র। এর মধ্যে দুই সিটির ১৮টি কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ— কেন্দ্রগুলোর ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রভাব, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের ক্ষোভ, বিরোধী দলের শক্ত প্রার্থী থাকা ও এলাকাগুলো ‘অপরাধপ্রবণ’ হওয়ায় কারণে কেন্দ্রগুলো ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে শনাক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আগের দায়িত্ব পালন করা কাউন্সিলর যারা দলের মনোনয়ন পাননি তারাও ভোটে লড়াই করছেন। অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে জোর প্রচারণা চলছে। কিছুদিন আগে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। এতে অবৈধ উপায়ে যারা অর্থ আয় করেছেন তারা অনেকটা ‘দৌড়’ এর ওপর রয়েছেন। কিন্তু তাদের পক্ষ এবং বিপক্ষের লোকজন সক্রিয় আছে এলাকায়। আর তাতে করেই ওইসব ভোটকেন্দ্রের এলাকাগুলোতে দলাদলির প্রভাবে সংঘাত-সংঘর্ষ-হামলার প্রবল শঙ্কা রয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সে সঙ্গে ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা জমাও দেয়া হয়েছে।  

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রসমূহ

বাড্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাড্ডা হাইস্কুল, তেজগাঁও কলেজ, সেন্ট্রাল রোডের আইডিয়াল কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ (মিরপুর), ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, আল হেরা কলেজ, বাড্ডা কলেজ, নিকুঞ্জ মডেল কলেজ, পল্লবী কলেজ, রামপুরা একরামুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, শের-ই-বাংলা আদর্শ মহিলা কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ, তেজগাঁও মহিলা কলেজ, উত্তরা মডেল টাউন স্কুল, নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ, কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা ওমেন কলেজ (উত্তরা), খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মতিঝিল), নটরডেম কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, সলিমুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ (ওয়ারি), সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ, মতিঝিল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, আবুজর গিফারী ইউনিভার্সিটি কলেজ, মালিবাগ অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আরামবাগ গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদুল্লাহ কলেজ (বকশীবাজার), হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, পুরানা পল্টন গার্লস কলেজ, আর কে চৌধুরী কলেজ (সায়েদাবাদ), দনিয়া কলেজ, ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজ (শহীদবাগ), ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজ, মেহেরুন্নেছা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মির্জা আব্বাস ওমেন্স ডিগ্রি কলেজ (শাহজাহানপুর), শাহ আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শান্তিবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, টি অ্যান্ড টি কলেজ, মতিঝিল ও বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ

ঝুঁকিপূণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘আগাম’ সতর্কতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট থানা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো ও আশ-পাশের এলাকায় থানা পুলিশের মোবাইল পার্টি, পিকেট পার্টি, হাঁটা পার্টি, গাড়ি টহল পার্টিকে আরও বেশি সক্রিয় হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিট পুলিশিংকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে চেকপোস্ট বসানোরও নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।

ভোটের দু’এক দিন আগে থেকে ভোটকেন্দ্রের আশ-পাশের এলাকাগুলোতে দুর্বৃত্তদের দমনের জন্য বাসা-বাড়িগুলোতে ‘ব্লক রেড’ দেয়ারও নিদের্শনা রয়েছে। 

বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ-হামলা

দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন যত ঘনিয়ে আসছে সংঘাত-সংঘর্ষ-হামলার খবর ততই বাড়ছে। প্রতিপক্ষের প্রচারে বাধা, হামলা, ভাঙচুরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভোটের ময়দান। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে ঢাকা দক্ষিণে অভিযোগ জমা পড়েছে ৭০ টি আর উত্তরে ৩০ টি।

অভিযোগকারীদের সিংহভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থী।

১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) দুই সিটির অনুষ্ঠিতব্য ভোটে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৭৬৯ জন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে দক্ষিণ ঢাকার কামরাঙ্গীর চর থেকে আর উত্তরের মিরপুর থেকে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জামাল মোস্তফার নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। পাল্টা অভিযোগ করেছেন মোজাম্মেল হোসেনও।

ডিএনসিসি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী জামাল মোস্তফা আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, আমার নির্বাচনি স্টিকার লাগানো হয়েছে সেগুলো উঠিয়ে ফেলা হচ্ছে। নির্বাচনি ক্যাম্পও ভাঙচুর করা হয়েছে। অপরদিকে অভিযোগের জবাব দিয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলছেন, সব মিথ্যা কথা। নিজেরা ভেঙে আমাদের দোষ দিচ্ছে।

প্রার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানালেও তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিলেও সেসব অনেকটাই দায়সারা ও সতর্ক করে দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসির বিএনপি সমর্থিত ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ফরহাদ বলছেন, মামলা নিয়েই মাঠে নেমেছি, মাঠে থাকবো। হামলা করে মাঠ থেকে সরানো যাবে না।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি, কর্মীদের কুপিয়ে জখমের ঘটনা বাড়ছে স্বীকার করছে নির্বাচন কমিশনও। এসব অভিযোগের বিষয়ে কমিশন কেবল তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

ডিএসসিসি রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন অভিযোগ বাড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া আছে। আমাদের দিক থেকে কিন্তু প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগও আছে।

সব মিলিয়ে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সংঘাতের আশঙ্কা তত বাড়ছে। নির্বাচনের উত্তেজনা বাড়লে ভোটারের উপস্থিতিতে সেটা প্রভাব ফেলতে পারে। নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকেও।

ছবি ● সংগৃহীত

এসএমএম

আরও পড়ুন