• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৫:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৫:৫২ পিএম

সম্রাটের গ্রেফতার নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না

সম্রাটের গ্রেফতার নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না

আলোচিত-সমালোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটে নি। রাজধানীর বনানী ডিওএইচএস থেকে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে মর্মে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর এলেও আইন শৃঙ্খলা-বাহিনী এখনও তা নিশ্চিত করে নি।

মূত্রমতে, সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেলেই সম্রাট রহস্য উন্মোচিত করা হবে।

সম্রাট গ্রেফতার কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অপরাধ যে-ই করবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আপনারা খুব শিগগির তা দেখবেন, অপেক্ষা করুন। এই কথাগুলো বলেছিলেন গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর)। তার দুদিন পর রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্রাটের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বলেছেন, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি যথাযথ। এ বিষয়ে তিনিই বলার অধিকার রাখেন।

জানা গেছে, রাজধানীর কাকরাইলের নিজ অফিসে কয়েকদিন দলীয় কর্মীদের নিরাপত্তা বেস্টনিতে ছিলেন সম্রাট। সেখান থেকে বনানী ডিওএইচএস এলাকায় আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার বাসায় অবস্থান নিয়েছিলেন। সাদা পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাড়ির চারপাশে অবস্থান নিলে শুরু হয় দেন-দরবার।এক পর্যায়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে ওই নেতা শুক্রবার মধ্যরাতে সম্রাটকে র‌্যাবের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন।

সূত্র জানায়, শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই র‌্যাব হেফাজতে রয়েছেন রাজধানীতে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির প্রধান হোতা। দফায় দফায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার গডফাদারসহ পুরো চক্রের অপরাধ বাণিজ্যের তথ্য বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ওপর নির্ভর করছে সম্রাটের ভাগ্য। সবুজ সঙ্কেত পেলেই তাকে প্রকাশ্যে হাজির করা হবে। 

তবে অপর একটি সূত্র জানায়, সম্রাট এখনও ওই নেতার বাড়িতেই অবস্থান করছেন অনেকটা ‘হাউস অ্যারেস্ট’ এর মতো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে সার্বক্ষণিক নজরবন্দি করে রেখেছেন। সিদ্ধান্ত পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। অবশ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে একেবারেই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কোনও কিছু বলছে না।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) থেকে রাজধানীতে ক্যাসিনো, জুয়াসহ দুর্নীতি অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার হয় যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্ণধার ও বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেনসহ রাজনৈতিক হর্তাকর্তা। তার পর থেকে বেরিয়ে আসে কাড়িকাড়ি টাকা ও সোনাদানা। অভিযানের শুরু থেকেই আলোচনা-সমালোচনায় আসে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

প্রতি রাতে ৪০ লাখের বেশি আয় হতো সম্রাটের

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে নামার পর দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এই সভাপতি জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। সম্রাটের জুয়ার নেশাও নাকি ভয়াবহ। প্রতিমাসে ঢাকার বাইরে যান জুয়া খেলতে। নিয়মিতই নাকি সিঙ্গাপুরে গিয়ে বড় বড় জুয়ার আসরে যোগ দেন। 

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসার সন্ধান পায়। বিশেষ করে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযানের পর জানা যায়, এই বিশাল অন্ধকার জগৎ সম্পর্কে। এরপর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেও বড় লেনদেনের সন্ধান মেলে। বাদ পড়ে নি মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবও। এরই মধ্যে ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। তিনি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের অনুসারী বলে পরিচিত ছিলেন। গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াও।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে যে নামটি সেই সম্রাটের অবস্থান বিষয়ে পাওয়া যাচ্ছে না কোনও বিস্তারিত তথ্য। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বড় একটি অংশই চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট। তার অধীনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ১৫টিরও বেশি ক্যাসিনো। এসব ক্যাসিনো থেকে নাকি প্রতি রাতে ৪০ লাখ টাকারও বেশি টাকা পেতেন সম্রাট। কোনোটি থেকে প্রতি রাতে ২ লাখ টাকা, কোনোটি থেকে ৩ লাখ টাকা, কোনোটি থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্তও চাঁদা পেতেন তিনি।

এসব ক্লাবের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে- ভিক্টোরিয়া ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব, ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, ফু-ওয়াং ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, ইয়াংমেন্স ক্লাব, এজাক্স ক্লাব। প্রতিদিনই ক্লাবগুলোতে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা চলতো।

জানা গেছে, এসব ক্লাবের কয়েকটিতে সম্রাট জোরপূর্বক নিজের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আবার কয়েকটিতে তার অধীনস্ত ক্যাডাররা গিয়ে ভাগের টাকা নিয়ে আসতো। কোনও ক্যাসিনো ক্লাব টাকা দিতে অস্বীকার করলে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হতো। কলাবাগান ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এক জুয়াড়ি সম্রাটকে চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পাঠিয়ে সেটি বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। এতে তার বিষয়ে ভীতি আরও পোক্ত হয়- ক্যাসিনো ব্যবসা করতে হলে সম্রাটকে চাঁদা দিয়েই করতে হবে। ফলে প্রতিরাতে ৪০ লাখ টাকার বেশি আয়কে অবাস্তব মনে করছে না সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

নানা খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে তার কর্মীদের ভাগ দিতে ভুল করতেন না সম্রাট। যে কারণে সুদৃঢ় চেইন অব কমান্ড মেনে ব্যবসা করে যেতে পেরেছেন তিনি।

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন