• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৪:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৪:৪৫ পিএম

নুসরাত হত্যা

মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলা আসবে হাইকোর্টে

মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলা আসবে হাইকোর্টে

নিম্ন আদালত কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিলে ওই দণ্ড কার্যকর করতে হলে উচ্চ আদালতের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) নিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী এই অনুমোদন নেয়ার জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা জানান, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড কার্যকরের আগেও তা অনুমোদনের জন্য সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আসবে।       

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাফিকে হত্যার দায়ে ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

আইনজীবীরা জানান, বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের কেউ আপিল করতে চাইলে তারা আপিল করতে পারবেন।

বিচারিক আদালতের রায়ে বলা হয়- ‘রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা চাইলে বা ইচ্ছা করলে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করতে পারবেন।

রায়ে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারায় ‘মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের’ জন্য মহামান্য হাইকোর্টে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায়ের অনুলিপি বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেল সুপার ফেনী বরাবর পাঠানোর জন্য রায়ে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ জজ মামুনুর রশিদ সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া রায়ে সকল আসামিকে পৃথক পৃথকভাবে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। নুসরাতকে হত্যার পর প্রায় ৭ মাসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ হলো।

রায়ের পরে নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এমনই হওয়া উচিত। গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর স্বল্পসময়ে রায় হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এই রায় চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে হাইকোর্টে। কতজনের ফাঁসি থাকবে বা থাকবে না এটা হাইকোর্টের জন্য বিবেচ্য বিষয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তোষ প্রকাশ করছি এ জন্য, অল্পসময়ের মধ্যে বিচার কাজটা সম্পন্ন হলো।

দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষ হাইকোর্টে আপিল করবেন আইনের বিধান অনুযায়ী। বিচারিক আদালতের রায়ের কপি হাইকোর্টে আসতে ফৌজদারি কার্যবিধির কয়েকটি ধারা অনুসরণ করা হবে।

ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এজন্য ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের) নথিপত্র হাইকোর্টে আসবে রায় ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে। তামাদি আইনের ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে ৭ দিনের মধ্যে। এরপর যথযাথ নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য তৈরি করা হবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত)।

সাধারণত ডেথ রেফারেন্স শুনানি করা হয় বিভিন্ন উচ্চ আদালতের নিয়ম অনুযায়ী। তবে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্বির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানির ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এ রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন।

হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স শুনানি করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখতে বা কমাতে পারেন। আইন অনুযায়ী আসামিরাও সাজা থেকে খালাসের জন্য আপিল করতে পারবেন। তামাদি আইনের ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হয়। আপিল করলেই বিচারিক আদালতের সাজা স্থগিত হয়ে যাবে। এটি আইনের বিধান। ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট। এরপর এ মামলার কোনও পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে আপিল করতে পারবেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে। এখানে আপিল আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এরপরই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির কতিপয় ক্ষেত্রে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে সুপ্রিমকোর্টে আপিলের বিধান করা হয়েছে। আপিল বিভাগে যাওয়ার আগে প্রয়োজন হতে পারে লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন)। লিভ টু আপিল গ্রহণ করা হলে আপিল করতে পারবেন সংক্ষুব্ধ আসামি বা বাদীপক্ষ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৪২ (ক) ধারা অনুযায়ী আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আপিল দায়েরের পর ৯০ দিনের মধ্যে সেটি নিষ্পত্তি করতে হয়। আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। দণ্ডবিধির ৫৫ (ক) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আসামিকে ক্ষমা করে প্রাণভিক্ষাও দিতে পারেন।

ফেনীর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রায়ের জন্য  বৃহস্পতিবার ধার্য করেছিলেন।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার মাধ্যমে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।

৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়।

১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়।

গত ২৯ মে আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। বৃহস্পতিবার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামিরই ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

এমএ/এসএমএম 

আরও পড়ুন