• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৯:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৯:২৪ পিএম

ইসিতে কর্তৃত্বের লড়াই ১০ বছরের পুরনো!

ইসিতে কর্তৃত্বের লড়াই ১০ বছরের পুরনো!
ইসি ভবন

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০তম গ্রেডের ৩৩৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে নতুন করে ৪ নির্বাচন কমিশনার- মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রি. জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে কর্তৃত্বের লড়াইয়ে নেমেছেন স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর।

নিয়োগ কার্যক্রমে ‘বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে’ উল্লেখ করে সম্প্রতি ৪ নির্বাচন কমিশনার ‘আন-অফিসিয়াল (ইউও) নোট’ দেন।

ইউও নোটের প্রেক্ষিতে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, নিয়ম অনুযায়ীই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কিছু হয়েছে। নিয়োগে কোনও ধরনের অনিয়ম হয়নি।

তিনি জানান, ৯০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ইসি, পিএসসি, জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন। ওই বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, নিয়োগে কোনও ধরনের অনিয়ম হলে কমিশন তা তদন্ত করে দেখতে পারে। কমিটির সুপারিশ কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সিইসির কাছে উপস্থাপন করেছি। ২০০৯-২০১০ সাল থেকে নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে।

ইসি সচিবালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সিইসি-সচিবের সঙ্গে কর্তৃত্বের এ লড়াই এবারই প্রথম নয়। ২০০৯ সালে ড. এ টি এম শামসুল হুদার কমিশনেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এক পর্যায়ে তখনকার সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদা অপর দুই নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও ব্রি. জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের অবস্থানের ওপর বিরক্ত হয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইনের ৫ ও ১৪ ধারায় ইসি সচিবালয়ের কর্তৃত্ব সিইসির ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তাতে আপত্তি জানিয়ে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ওই ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসি সচিবালয়ের ওপর ‘সিইসির নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেন তখনকার সিইসি শামসুল হুদা।

ড. এটিএম শামসুল হুদার যুক্তি ছিল, ইসির কাজের বিষয়ে ৯০ শতাংশ সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের সভায়। বাকি ১০ শতাংশ প্রশাসনিক কাজ সিইসির নিয়ন্ত্রণে সচিবের তত্ত্বাবধানে হয়। প্রশাসন পরিচালনা ও সমন্বয়ের স্বার্থে ইসি সচিবালয়ে একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত কমিশনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ‘সম্ভব নয় কিংবা প্রয়োজনীয় নয়’। একইভাবে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসিতেও ক্ষমতার বিরোধ দেখা দিয়েছিল। কমিশনারদের মধ্যে কার পরে কে ফাইলে সই করবেন, সেই ক্রম নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। এরপর কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেয়ার দেড় বছরের মাথায় ২০১৮ সালে ফিরে আসে একক কর্তৃত্বের বিতর্ক। এর এক বছরের মধ্যে নিয়োগ নিয়ে ফের কর্তৃত্বের লড়াই দেখা দিয়েছে ইসিতে।

 

সিইসি যদি প্রয়োজন মনে করেন, কোনও কিছু জানানোর দরকার তাহলে তিনিই কমিশনকে জানাবেন। এখানে সচিব জানানোর কিছু নেই 

...

কমিশনে দ্বন্দ্ব আছে বলে জানা নেই। সচিব হিসেবে সেটা ফিল করি না। এটা নির্বাচন কমিশনার মহোদয়রা কেন বলেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন 

 

.................................................................................................

সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর ৪ কমিশনার সংবিধান, আরপিও, ইসি সচিবালয় আইন ও বিধির আলোকে ‘‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওপর কার্যাদির বিষয়ে ‘নির্বাচন কমিশন’ এর এখতিয়ার প্রসঙ্গে” এক ইউও নোট পাঠান সিইসির কাছে। ওই নোটে সই করেন ৪ নির্বাচন কমিশনার- মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রি. জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।

ইউও নোটে তারা উল্লেখ করেন, ‘‘সচিবালয় এককভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে; যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লংঘন।’’

জবাবে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর জানান, আইনে শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে পুরো নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। ইসির প্রশাসনিক হেড সচিব। আর এর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সিইসি। নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয় পুরো কমিশন থেকে অনুমোদন নিতে হয়। পুরো ইসি সচিবালয়েরও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেটা কীভাবে? সরাসরি নয়, উনারা যদি বলেন সচিব এ তথ্যটা দেন, তাহলে আমি দিতে বাধ্য। এ নিয়োগ কীভাবে হয়েছে সমস্ত কাগজপত্র দেখান, দেখাতে হবে। কর্মচারী নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশনারদের ‘অবগত’ করার বিষয় নয় উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, শতভাগ আইনসম্মতভাবে ও স্বচ্ছভাবে কাজ হয়েছে।

৪ নির্বাচন কমিশনারকে না জানিয়ে কাজ করা আইনসম্মত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘এটা হানড্রেড পারসেন্ট আইনসম্মত। সংবিধান, আইন, বিধি ও নিয়ম-কানুন ফলো করে করা হয়েছে। এ নিয়োগে আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি। এটা প্রথম নিয়োগ নয়, প্রতিবারই একইভাবে নিয়োগ হয়েছে। কখনও কমিশনে যায়নি বিষয়টি।বিষয়টি তো কমিশনারদের কাছে যাওয়ারই কথা নয়; বাইপাস হলো কীভাবে? প্রশ্ন রাখেন সচিব।

আইন-বিধি তুলে ধরে ইসি সচিব বলেন, মাননীয় কমিশনারবৃন্দ যেমন বলেছেন, কমিশনকে বাইপাস করে দেয়া হয়েছে এটা। তাহলে উত্তর দিতে পারলাম- এটা কমিশনে যাওয়ার বিষয় নয়। আমরা আইনে দেখিয়ে দিলাম, এটা কমিশনের কাছে যায় না।

স্বাধীন ইসি সচিবালয় আইনের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে তিনি জানান, ইসির সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সিইসির কাছে ন্যস্ত থাকবে এবং সচিব ইসি সচিবালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেখবেন। আইনের পুরোটাই পড়তে হবে। সিইসি যদি প্রয়োজন মনে করেন, কোনও কিছু জানানোর দরকার তাহলে তিনিই কমিশনকে জানাবেন। সচিব জানানোর কিছু নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কমিশনে কোনও দ্বন্দ্ব আছে বলে আমার জানা নেই। আমি সচিব হিসেবে সেটা ফিল করি না। এটা নির্বাচন কমিশনার মহোদয়রা কেন বলেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি তো ডিটেইল বলে দিলাম।

ইউও নোটের ব্যাখ্যা প্রস্তুত করার বিষয়ে সচিব বলেন, সিইসির কাছে উনারা দিয়েছেন। সিইসি মহোদয় আমাকে বলেছেন এ বিষয়ে আইন-কানুন যা আছে সব নিয়ে এ নিয়োগের বিষয়ে স্ট্যাটাস পেপারসহ আমাদের কাছে জমা দেন। সিইসি মহোদয় যদি প্রয়োজন মনে করেন কমিশনার মহোদয়ের কাছে উপস্থাপন করবেন, আলোচনা করবেন।

৪ নির্বাচন কমিশনারের অভিযোগ ভিত্তিহীন কিনা- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘উনাদের বিবেচনায় যেটা ভালো মনে করেছেন, বলেছেন। নিয়োগ নিয়ে এটা তো প্রথম প্র্যাকটিস নয়, প্রতিটি নিয়োগই এভাবে হয়েছে।’

এইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন