• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯, ১২:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯, ০১:২৫ পিএম

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নেতাজী পরিবারে গুরুতর প্রশ্ন

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নেতাজী পরিবারে গুরুতর প্রশ্ন
চন্দ্র বসু-ছবি : কলকাতা প্রতিনিধি

ভারত হল এমন একটা দেশ, যেখানে সমস্ত ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত পরিস্থিতি রয়েছে। অন্য একটি টুইটে তিনি বলেন, ভারতের সমীকরণ করবেন না। এই দেশটিকে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে তুলনাও করবেন না

..................

নাগরিকত্ব আইনি (সংশোধনী) নিয়ে যখন ভারতজুড়ে বিক্ষোভ চলছে, ঠিক তখনই এই আইন সম্পর্কে মানুষকে ‘বোঝাতে’ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) কলকাতার রাজপথে বিশাল মিছিল করে বিজেপি। কিন্তু সেই রেশ কাটার আগেই মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) এক বোমা ফাটিয়েছেন বিজেপি’র সংসদ সদস্য তথা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসু। তিনি সরাসরি আইনটির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।

ক্ষমতায় আসার পরই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস আমলে নেতাজী উপযুক্ত সম্মান পাননি, সেই সম্মান তাকে বিজেপি সরকার দেবে, এই কথা বলে একাধিকবার নেতাজীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। সে সময় রাজনৈতিক মহলে বলা হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদীর নেতাজীকে নিয়ে এই বিশেষ বাড়াবাড়ি যতটা না নেতাজীর প্রতি শ্রদ্ধাবশত, তার চেয়ে অনেক বেশি বাঙালি ভোটারদের পাশে পাওয়া। একই সঙ্গে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করা। এভাবেই এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই বসু পরিবারেরই অন্যতম সদস্য চন্দ্র বসু মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) নরেন্দ্র মোদী সরকারের নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দেওয়ায় বিতর্কটি ভিন্ন মাত্রা পেয়ে গিয়েছে।

২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন এই চন্দ্র বসু। কিন্তু নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তিনি যে টুইট করেছেন, তাতে বিজেপি নেতৃত্ব যারপরনাই অস্বস্তিতে পড়েছে। দেশজুড়ে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, ওই আইনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক যদি নাই থাকবে, তাহলে শিখ, হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি, ও খ্রিস্টানদের কথা উল্লেখ করা আছে কেন? মুসলমানদেরই বা ওই তালিকায় ঢোকানো হচ্ছে না কেন? এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা রাখা হচ্ছে না কেন?

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ভারতজুড়ে। বিজেপির জোট শরিকদের কেউ কেউ ওই আইনের বিরোধিতাও করেছেন। এনডিএ শরিক জেডি(ইউ) দলের নীতাশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে (বিহারে) এনআরসি কার্যকর করা হবে না। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডিও একই কথা জানিয়েছেন। গোটা দেশের ১৬টি রাজ্য এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছে, এনআরসি কিংবা এনপিআর লাগু করা হবে না তাদের রাজ্যগুলোতে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিজেপি সরকারকে হারিয়ে ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস-ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জোট। তারাও যে এই আইনের বিরোধিতা করবে, তা বলাই বাহুল্য। সব মিলিয়ে মোট ১৭টি রাজ্য এই ‘কালা আইনের’ বিরোধিতা করেছে।

নেতাজীর প্রপৌত্র চন্দ্র বসু বলেছেন, ভারত হল এমন একটা দেশ, যেখানে সমস্ত ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত পরিস্থিতি রয়েছে। অন্য একটি টুইটে তিনি বলেন, ভারতের সমীকরণ করবেন না। এই দেশটিকে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে তুলনাও করবেন না।

যদিও এই আইন ভারতীয় মুসলিমদের কোনও ক্ষতি করবে না, এই কথা বলে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করেছে বিজেপি। তবুও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে। এই আইনের বিরোধিতায় পথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তাবড় রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

সংসদে পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনপ্রাপ্ত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যে সব অমুসলিম মানুষরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা এবার ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ডিজিজি/এসএমএম

আরও পড়ুন