• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০১৯, ০৯:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৭, ২০১৯, ০৯:৫১ পিএম

রক্তদাতার সংখ্যা শতভাগ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এখনও বহুদূরে

রক্তদাতার সংখ্যা শতভাগ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এখনও বহুদূরে
রক্তদাতার প্রতীকী ছবি

বি শে ষ  প্র তি বে দ ন

................

 

২০২০ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা শতভাগ করার অঙ্গীকার করলেও তা থেকে অনেক অনেক দূরে আছে বাংলাদেশ। গত ১০ বছরে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে ঠেকেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- স্বাস্থ্যখাতের অন্য বিষয় নিয়ে সরকারের যতটা উৎসাহ দেখা যায়, স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সৃষ্টিতে ততটা উৎসাহ দেখা যায় না। যার ফলে ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে দিয়ে আসা অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। 

জানা গেছে, ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আয়োজিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংখ্যা (হু)। এতে ২০২০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়া হয়। সেই ঘোষণার প্রতি বাংলাদেশ সমর্থন দেয় এবং অঙ্গীকারও করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তস্বল্পতা, ওজন কম, অস্বাভাবিক রক্তচাপ, হেপাটাইটিস বি ও সি, ম্যালেরিয়া, এইডস অথবা কোনও যৌনরোগাক্রান্ত, বহুগামী বা সমকামী, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী ব্যক্তিরা রক্তদান করতে পারেন না। কম ঝুঁকিপূর্ণ রক্তদাতা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে যে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয়, তাকে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বলে। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে একজন রক্তদাতা শারীরিক সুস্থতার পাশপাশি হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো প্রাণহরণকারী রোগ থেকেও নিরাপদ থাকতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, কিছু সংগঠন স্বেচ্ছা রক্তদানের সাথে ব্লাড ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেসব সংগঠন থেকে রক্ত পেতে অর্থ লাগছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে রক্তের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এতে একজন কাজের সময় পাবে, কিন্তু আরেকজন পাবে না। এজন্য জাতীয় একটি জাতীয় কর্মসূচির মাধ্যমে শতভাগ স্বেচ্ছা রক্তদান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বর্তমানে দেশে প্রতিবছর রক্তের চাহিদা ১০ থেকে ১২ লাখ ব্যাগ। এর মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ১ লাখ ব্যাগ রক্ত। সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ ব্যাগ সংগৃহীত হয় আত্মীয়-স্বজন ও নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে। বাকিগুলো ঘাটতি হিসেবেই গণনায় থাকছে।

ছেলেদের শরীরে ওজনের কেজিপ্রতি ৭৬ মিলিলিটার এবং মেয়েদের শরীরে ওজনের কেজিপ্রতি ৬৬ মিলিলিটার রক্ত থাকে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই কেজিপ্রতি ৫০ মিলিলিটার রক্ত সংবহনের কাজে লাগে, বাকিটা অতিরিক্ত। ফলে ৫০ কেজি ওজনের একটি ছেলের শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ ১৩০০ মিলি এবং একই ওজনের একটি মেয়ের শরীরে উদ্বৃত্ত রক্তের পরিমাণ ৮০০ মিলি। স্বেচ্ছা রক্তদানে একজন দাতার কাছ থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করা হয়, যা তার শরীরের উদ্বৃত্ত রক্তের অর্ধেকেরও কম। ফলে রক্তদানে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কাই নেই। কিন্তু বিষয়টির গুরুত্ব না বুঝে, আতঙ্কিত হয়ে এবং সঠিক প্রচারের অভাবে এখনও রক্তদানে সক্ষম দেশের মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদানে আগ্রহী হয়ে ওঠে নি বলে মনে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিয়মিত ৩ থেকে ৪ মাস অন্তর রক্তদান করতে পারে। এতে শারীরিক ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই বরং তা রক্তদাতার শারীরিক সুস্থতা বাড়িয়ে দেয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহী করে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন শতভাগ নিশ্চিত করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এখন দেশে রক্ত নিরাপদভাবেই পরিসঞ্চালন হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরএম/একেএস

আরও পড়ুন